December 22, 2024, 5:18 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলরও যদি বলে আমাকে চায় না, তাহলে আমি নেতৃত্বে থাকব না। দীর্ঘদিন তো হয়ে গেছে, অবশ্যই আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক। কাউন্সিলররাই মূলত নেতৃত্ব ঠিক করে, তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, আমরা একটানা ক্ষমতায় ছিলাম বলে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। এখন বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার যাওয়ার আসলে সময় হয়ে গেছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করে স্বল্প-উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করে দিয়ে যান। জাতিসংঘ এর স্বীকৃতি দিয়েছিল। এরপর এ দেশে কী ঘটেছে? গণতন্ত্র ছিল না, তার পরিবর্তে ছিল মিলিটারি শাসন। অনেক চড়াই উৎরাই পার করে আমরা গণতন্ত্র উদ্ধার করি। একটানা ৩ বার, ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০২২ সাল পর্যন্ত, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটানা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে।
তিনি আরও বলেন, এর মাঝে অনেক চড়াই উৎরাই, খুন খারাবি, অগ্নি সন্ত্রাসসহ নানা কিছু ঘটিয়েছে। তারপরও আমরা একটানা ক্ষমতায় ছিলাম বলে উন্নয়নশীল দেশে আমারা উন্নীত হয়েছি। এখন বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে টানা ১৮ দিনের সফর শেষে গত সোমবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত একটার দিকে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে যান শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং রাজা চার্লস তৃতীয় আয়োজিত অভ্যর্থনায় যোগ দেন। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্কের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময় ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। সফরের শেষ সপ্তাহে ওয়াশিংটনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির তো খুঁটির জোর নেই। যদি সেটা থাকতো তাহলে তো তারা বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে যেতো না, ধরনা দিয়ে বেড়াতো না।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ বিএনপিকে সবক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা কোন মুখ নিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে। আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, পেট্রলবোমা মারা, নাশকতা করে মানুষ খুন করেছে। এখন মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবে কোন মুখ নিয়ে। পারছে না বলেই বিদেশিদের পিছে পিছে ঘুরছে।’
আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশ নেবে না বলে আসছে- এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকার কী ভাবছে? এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া যেকোনো রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আমরা কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। তবে চাইবো- সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অনেক হুমকি দিচ্ছে। এটাই তো তাদের কাজ। যত উন্নয়নই হোক, বিরোধিতা করাটাই তাদের কাজ। তবুও তারা যদি শক্তিশালী হতো, তাহলে অনেক কিছুই হতে পারতো।
আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলরও যদি আমাকে না চায়, তাহলে আমি থাকবো না। দীর্ঘদিন হয়ে গেছে। আমি অবশ্যই চাই আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসুক। নেতৃত্ব কাউন্সিলররা ঠিক করেন। কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তটাই চূড়ান্ত।
তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় পরিণত হয়েছি। এখন বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে করা আরেক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘র্যাবকে আমেরিকা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে, তারা তো তেমনই কাজ করছে।’
বাংলাদেশে সন্ত্রাস না থাকায় আমেরিকা নাখোশ কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে বিকেল ৪টার দিকে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দেন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
Leave a Reply